সুলতান ভাই কিছু স্মৃতিকথা

কিছু কিছু ব্যক্তি থাকেন যারা মুহূর্তের সাহচর্যে অন্যকে চুম্বকের মতো আকর্ষণ করেন , আকৃষ্ট করেন , সম্মোহিত করেন । এমনি এক ব্যক্তিত্ব ছিলেন শিল্পী এস.এম. সুলতান । আমাদের সুলতান ভাই । জীবন , জীবন - যাপন, জীবন - যাপনের উপকরণ সম্পর্কে ধার ছিল অপরিসীম নির্লিপ্ততা । অন্যদিকে সামাজিক অধঃপতন , মূল্যবোধের অবক্ষয় , সর্বোপরি এদেশের দিশেহারা কোটি অসহায় মানুষের প্রতি সহমর্মিতায় তিনি ছিলেন সদা সচেতন । এদেশের শতকরা আশিভাগ দারিদ্রসীমার নীচে বসবাসরত মানুষের যথার্থ অবস্থান উপলব্ধি করেই হয়ত তিনি তাদের আঁকতেন বলিষ্ঠ , পেশল অতিকায় এক একজন মানুষ হিসেবে । দৈনন্দিন জীবনে কর্মরত মানুষ , বিরূপ প্রকৃতির সাথে সংগ্রামে লিপ্ত মানুষ অসম্ভব আকাঙ্ক্ষার বাস্তবরূপ — সব কিছুতেই তিনি পেতেন এক গভীর আত্মতৃপ্তি । সুলতান ভাইকে আমার সংগে প্রথম পরিচয় করিয়ে দেয় শিল্পী হামিদুর রহমান তার ইসলামপুরের পৈতৃক বাড়ীতে। সম্ভবত ১৯৫৯ সালের গোড়ার দিকে । আমি তখন সবে আমেরিকা ও ইউরোপে বছর খানেক ঘুরে দেশে ফিরেছি । একদিন সকালে হামিদের বাসায় গিয়ে দেখলাম অদ্ভুত ধরনের একজন লোক বসে আছেন সোফায় । গেরুয়া রঙের একটা শাড়ী পরা আর একটা শাড়ী কাষে , ছিপছিপে , পেশীবহুল , সুন্দর সুঠাম শরীর। লম্বা পিঠ - ছাওয়া কালো কোকড়ানো চুল । হামিদ বললো , ' আরে কৃষ্ণকে চেন না ? ' কৃষ্ণের অবতারই বটে। ভাবলাম যাত্রা দলের কোনো অভিনেতা টেতা হবেন । নীরবে সোফার ঠিক মাঝখানে বসে সামনের টেবিল থেকে মাংস আর পরোটার একটা অংশ মুখে দিতে যাবেন , ঠিক ঐ সময় আমার আগমনে তিনি পরোটাটি না খেয়ে উঠে দাড়ালেন এবং বিনয়ের সংগে একটা মৌন সম্বোধন জানালেন আমাকে । হামিদ হেসে বলল , উনি শিল্পী, এস.এম. সুলতান সুলতানের নাম শুনেছিলাম কিন্তু ইতিপূর্বে পরিচয় হয়নি কখনো । হামিদ যখন আমার পরিচয় তার কাছে ব্যক্ত করলো , সুলতান বললেন ‘ ও , তাই নাকি । আলাপে বুঝলাম , তিনি নাটক করেন না , ছবি আঁকেন । আঁকতেন , এখন আঁকেন না । আমি শিল্পী জেনে আমার স্টুডিওতে আসার অভিপ্রায় ব্যক্ত করে কিছুক্ষণ গল্প করে তিনি বিদায় নিলেন সেদিনের মত । এর দু'দিন পর বিকেলে হামিদ এলো আমার তারাবাগের স্টুডিওতে । জিজ্ঞেস করল , সুলতান এসেছিল ? আমি বললাম , কই না ত ! হামিদ বললো , আমার কাছ থেকে দু'টাকা রিকসা ভাড়া নিয়ে তোমার এখানে আসার জন্যে সে - ত সেই সকাল দশটায় চলে এসেছে আমার বাসা থেকে । তাহলে গেল কোথায় ? পরে জেনেছিলাম , হামিদই বলেছিল , ' ঐদিন সুলতান তোমার বাসায় আসার আগে এক টাকার নেশা করেছিল । পরে বিকেল পর্যন্ত চেষ্টা করেও তোমার স্টুডিওর রাস্তা আর সে খুঁজে পায়নি তাই আর আসাও হয় নি । এর কয়েকদিন পর হামিদ নিজই সঙ্গে করে নিয়ে এসেছিলো সুলতান ভাইকে । অনেকক্ষণ আড্ডা দেয়ার পর দুপুরে ভালো করে খাওয়া দাওয়া সেরে , ভুরিভোজনের তৃপ্তি নিয়ে সুলতান ভাই তার গঁাট থেকে বের করলেন একটা কলকি আর নেশার কিছু সরঞ্জাম । কিছু শুকনো পাতা আর ইটের একটা ছোট্ট টুকরো । ইটের টুকরোটাকে কলকির মাঝখানে বসিয়ে শুকনো পাতাগুলো খুব সযত্নে আঙুল দিয়ে টিপে টিপে খুঁজে দিলেন ঐ কলকির মধ্যে। তারপর একটা দেয়াশলাইর কাঠি জ্বালিয়ে পাতায় আগুন ধরিয়ে দু'হাতের মুঠোর মধ্যে কলকিটাকে চেপে ধরলেন, যেমন করে গলফের স্টিক ধরতে হয় অনেকটা তেমনি ভাবে । তারপর কষে একটান । সমস্ত ধুয়াটা ফুসফুসের মধ্যে মিনিটখানেক ধরে রেখে আস্তে আস্তে ছেড়ে দিলেন । এই পদ্ধতিতে আরো একটান দিয়ে রেখে দিলেন কলকিটা আমার বইয়ের শেলফটার এক কোণে ।হামিদ এবং আমি দুজনেই এই দৃশ্যাট খুব মনযোগ দিয়ে দেখলাম এবং একে অন্যের দিকে চোখ মেলালাম । ইঙ্গিত বুঝে হামিদ সুলতান ভাইকে বললো , সুলতান , আমাদের জন্যেও একটা বানান না । " " খাবেন ? ' সুলতান বলেন । এবং তারপর কলকিটাকে পরিষ্কার করে একই ভাবে আরো একবার কলকি ধরিয়ে দিলেন । হামিদ আমাকে বললো , ' খাও ' । আমি বললাম , তুমি আগে খাও ' । অনেকদিন থেকেই এই নেশার গল্প শুনছি । এটা খেলে নাকি শরীর হাল্কা হয় , ইচ্ছে করলে গাছের ডালে চড়া যায় , গাছের ধারে কাছে না গিয়েও। এবং গাছের ডালে বসে মনের আনন্দে পা নাচানো যায় আর দেখা যায় গাছের নিচে দিয়ে লোকজন হেঁটে যাচ্ছে। ইচ্ছে করলে আকাশেও উড়ে যাওয়া যায় ইত্যাদি ইত্যাদি । এসব গল্প শুনেছিলাম বন্ধু খালেদ চৌধুরীর কাছে । বলা বাহুল্য , খালেদ ঐ সময়ের একজন পরিচিত পণ্ডিত , ইনটেলেকচুয়াল খালেদ ঐ নেশার একজন উচ্চমানের সমঝদার ছিলেন । যদিও কেবল এই বিষয়টিতেই তার একক পারদর্শিতা ছিল না – - বিশ্ব ব্রহ্মান্ডের প্রায় তাবৎ ঘটনাবলীর তিনি যেন প্রত্যক্ষদর্শী , অংশগ্রহণকারী একজন ছিলেন , এভাবেই যুক্তি তর্ক দিয়ে তা আমাদের বোঝাবার চেষ্টা করতেন । তাই ঐ বিষয়টি সম্পর্কে কিছু অভিজ্ঞতা সঞ্চয় অত্যাবশ্যক ছিল বলেই আমরা আগ্রহী হয়েছিলাম । হামিদ সুলতান ভাইয়ের অনুকরণে গোটা দুই টান দিয়ে কলকিটা আমার দিকে বাড়িয়ে দিল । আমিও অভিজ্ঞতা সঞ্চয়ের সুযোগ না হারিয়ে বুকভরে টান দিতে শুরু করলাম।ততক্ষণে সুলতান ভাই আমার শেলফ থেকে নারকেল তেলের বোতলটা নিয়ে হাতের তালুতে কিছুটা তেল ঢেলে চুলের মধ্যে আঙুল চালিয়ে অত্যন্ত যত্নসহকারে মেয়েদের মত তেল মাখতে শুরু করেছেন । বেশ কিছুক্ষণ কেটে গেল আমাদের । কোন নেশাই হয় না । হামিদকে বললাম , ' হামিদ , যে জন্যে খাওয়া সেটাই ত হলো না , তা হলে লাভ কি । আর একবার খাওয়া যাক । ' সুলতান ভাইকে একথা জানাতে তিনি বললেন , আর প্রয়োজন নেই , ওতেই হবে । আমরা জিদ ধরলাম না , আর একবার হয়ে যাক । সুলতান ভাই আর কথা না বাড়িয়ে আর এক কলকি বানিয়ে দিলেন । আমরাও আর উচ্চবাচ্য না করে দ্বিতীয় কলকির সদ্ব্যবহার করে ফেললাম । মিনিট বিশেক হবে আমাদের যাত্রা শুরু হয়েছিল , এর মধ্যে হঠাৎ আমার দরজায় টোকা । ' কে ? ' অবাব এলো , শমু। আমার ভ্রাতুষ্পুত্র শমু । সুলতান ভাই চেয়ারে বসে , আর আমরা দু'জন আমার বিছানায় বিছানা ছেড়ে উঠে দাঁড়াতেই মনে হল আমার হাটুর নীচের অংশটা বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে অর্থাৎ আমি যেখানে পা ফেলছি বলে ভাবছি, পা টা সেখানে পড়ছে না । আসলে পা - টা ওখানেই পড়ছে , কিন্তু মনে হচ্ছে যেন অন্য জায়গায় চলে যাচ্ছে । শমুকে একটা ধমক লাগালাম , ' এখন , এই দুপুর বেলা তুমি এখানে এসেছে কেন , যাও ঘুমাও গিয়ে ' । শমু চলে গেল , কিন্তু আমি যেন আর হাঁটতে পারছিনা— হামিদকে বললাম ব্যাপারটা । হামিদেরও একই অবস্থা । এরপর মনে হচ্ছিল শরীরের সব জোড়গুলো যেন খুলে গেছে এবং আমার নিয়ন্ত্রণের বাইরে তারা । বিছানায় শুয়ে পড়লাম । খুব খারাপ লাগছিল । মাথাও ঘুরচ্ছে । হঠাৎ এক ফোটা বৃষ্টি আমার গালে এসে পড়ল । হাত দিয়ে মুছে ফেললাম । আমার স্টুডিওর ছাদের টিনে ছিল বেশ কয়েকটা ছিদ্র , সেখান দিয়ে বর্ষার দিনে বৃষ্টি পড়ত ঘরের মধ্যে । কিন্তু খেয়াল হল , এখন ত বৃষ্টি নেই খাঁ খাঁ রোদ্দুর , তা হলে ? তা হলে বৃষ্টির ফোটা পড়ার মত অনুভূতি চামড়ার ওপর আর কিছুই নয় , নেশা নেশায় ধরেছে । সুলতান ভাইকে বললাম , এখন কি করা যায় ? অনেকক্ষণ পর তিনি বললেন , ' বলেছিলাম না একটাতেই হবে । এখন চুপ করে শুয়ে থাকুন সব ঠিক হয়ে যাবে ’ ‘ কতক্ষণ লাগবে ঠিক হতে ' ? ‘ এই ঘণ্টা তিনেক । আমার লাগে ঘণ্টা দুই ” । খুব অস্বস্তি লাগছিল । বললাম , ' কফি টফি খেলে ঠিক হয় না ? ” সুলতান ভাই হাত দেড়েক লম্বা একটা বাঁশি হাতে ধরিয়ে দিয়ে বললেন , এটা বাজান , মজা পাবেন । তখন আর রসিকতাও ভালো লাগছিল না । ইতিমধ্যে সুলতান ভাই পাহাড়ী ধুনে বাশি বাজাতে শুরু করেছেন । অপূর্ব লাগছিল সেই শ্রুতি । সাত আট ফুট দূরে শুয়ে থেকেও মনে হচ্ছিল যেন বহু দূর থেকে ভেসে আসছে সেই বাশির সুর । সুলতান ভাই বললেন , দেখতে পাচ্ছেন ওকে । বললাম ‘ কাকে ? ’ ‘ কেন ভালো করে শোনেন , দেখবেন ও স্নান সেরে কলশী কাঁখে পুকুরের সিঁড়ি দিয়ে ওপরে উঠে আসছে । আপনি নিজেকে পুকুরের জলের মধ্যে নিয়ে যান , দেখবেন এক একটা সিঁড়িতে ওঠার সময় তার শরীরের দোল খাওয়া ভঙ্গিগুলো । দেখছেন , দেখুন , দেখুন । বাঁশির সুরে তিনি যেন ঐ ভগিগুলোকেই বর্ণনা করছেন । আবার এক হাতে বাশি আর অন্য হাত দিয়ে সেই কল্পিত অঙ্গরীর শরীরের সীমারেখার গঠন দেখিয়ে দিচ্ছিলেন । বললেন ' ঐত রাধা । একটা সাবান চেয়েছিল আজ সকালে । হামিদের কাছ থেকে একটা টাকা নিয়ে ওকে সেই সাবান কিনে দিয়েছি , খুব খুশী । এদিকে আমাদের শারীরিক অবস্থা খুবই শোচনীয় । আমরা দুজনেই বিছানায় শুয়ে আর সুলতান ভাই মনের আনন্দ বাঁশি বাজিয়ে চলেছেন । হঠাৎ বাজনা থামিয়ে মেঝেতে পা ঠুকতে লাগলেন এবং বলতে লাগলেন , ' যাহ , যাহ্ ... ' তারপর বিড় বিড় করে কি যেন বলতে লাগলেন এবং ঐ বাশিটা বদলে একটা অপেক্ষাকৃত ছোট ধাশী হাতে নিয়ে নাড়া চাড়া করে আবার রেখে দিলেন এবং অন্য একটা ধাশি তুলে নিলেন । জিজ্ঞেস করেছিলাম, ‘ কাকে তাড়াচ্ছিলেন ? ’ ‘ দেখলেন না ও কেমন বিরক্ত করছিল ? ” বললেন সুলতান ভাই । ' ও ' অর্থাৎ রাধা। রাধা নাকি প্রায়ই তার কাছে এসে এটা সেটা বায়না ধরে তাই তিনি ধমক দিয়ে যেতে বলেন । অন্যমনস্কভাবে মাটিতে পা ঠুকে ‘ যাহ্ ’ ‘ যাহ্ ’ বলতে দেখতাম তাকে প্রায়ই । বোধ হয় রাধাকেই যেতে বলতেন । তাঁর কাছে যে চঁার পাচটা বাশি ছিল , প্রথমে তা লক্ষ্য করিনি । সুলতান ভাই আবার তার কল্পিত রাধাকে নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়লেন । কৃষ্ণমূর্তি সুলতানের সম্বল গাটের একটা কলকি আর কিছু শুকনো পাতা আর এক গোছা বাশি । কখন যে কৃষ্ণ বিদায় নিয়েছিলেন আর কখনই বা হামিদ চলে গিয়েছিল । আমার মনে পড়েনা । শুধু মনে পড়ে , এর পরের দিন পাচেক যেন আমার ঘাড়ের ওপরের মাথাটা আমার নিয়ন্ত্রণের বাইরে ছিল । যেন , যখন যেদিকে খুশী কাত হয়ে পড়ে যেতে পারে । এবং পরে আমার দৃঢ় বিশ্বাস হয়েছিল যে পৃথিবীর তাবৎ নেশার মধ্যে এটাই বোধ হয় নিকৃষ্ঠতম নেশা । .... যাবো ফের কান মলি ভাই , ও পথে আর যদি যাই ... ' । এরপর বছর খানেক ছিলাম দেশে । তখন সুলতান ভাই প্রায়ই আসতেন আমার স্টুডিওতে । সারাদিন গল্প করতেন । তার শিক্ষা জীবনের কথা , কি করে শাহেদ সোহরাওয়ার্দী তাকে কলকাতা আর্ট স্কুলে ভর্তি করে দিয়েছিলেন । ভালো না লাগায় কেমন করে একদিন পাড়ি জমালেন বিদেশের পথে । লন্ডন , আমেরিকা এবং পাকিস্তান ভ্রমণের কাহিনী বর্ণনা করতেন । দর্শন , বিজ্ঞান , সমাজতন্ত্র , নন্দনতত্ত্ব ইত্যাদি বিষয়ে অনর্গল কথা বলতেন ঘণ্টার পর ঘণ্টা । অবাক লাগতো তাঁর জ্ঞানের বিস্তার দেখে । কখনই এমন হতো না যে তিনি একই বিষয়ের পুনরাবৃত্তি করে আলোচনা করছেন । কোনো শিল্পী বা কারো সম্পর্কে কখনই কোনো বিরূপ মন্তব্য করতেন না । কখনও তাকে রাগ করতেও দেখিনি । সেরকম পরিস্থিতি হলে চুপ করে থাকতেন । সুলতান ভাইয়ের যে শিল্পকর্মটি আমি প্রথম দেখে মগ্ন হয়েছিলাম , সেটি ছিল একটি খবরের কাগজের ওপর জল রঙে আঁকা লাল ফুলে ভরা কৃষ্ণচূড়ার কয়েকটি গুচ্ছ । অপূর্ব স্বাচ্ছন্দ ছিল তুলির টানে আর রঙের ব্যবহারে । সম্ভবতঃ ঐ ছবিটি কোন ক্যালেন্ডারে ছাপা হয়েছিল , এখন আর তা সঠিক মনে নেই । এরপর , পশ্চিম পাকিস্তানের একজন বিশিষ্ট সরকারী কর্মচারী , সাংবাদিক এবং বুদ্ধিজীবী হামেদ জালালের বাসায় তার ব্যক্তিগত সংগ্রহে সুলতানের আরো একটি কাজ দেখেছিলাম । ভূস্বর্গ কাশ্মীরের একটি নিসর্গ চিত্র । অপূর্ব সুন্দর রঙ ব্যবহার । বরফে ঢাকা পর্বত শৃঙ্গ , ইউক্যালিপটাস গাছের সারি , সামনে ডাললেক । লেকে হাউজ - বোট আর শিকারা ( বিশেষ ধরনের নৌকা বেঁধে রাখা । আর তার ছায়া পড়েছে স্বচ্ছ স্ফটিক জলে । মুগ্ধ হয়ে গিয়েছিলাম ছবিটা দেখে । আমি নিজেও অসংখ্য জলরঙ - এর কাজ করেছি ঐ ধরনের পাহাড়ীদৃশ্যের ; কিন্তু সুলতান ভাইয়ের কাজে কম্পোজিশন এবং রঙ ব্যবহারের পরিমিতি আর দক্ষতা সত্যিই উচ্চ মানের । সুলতান ভাইয়ের সদৃশ আর একজন শিল্পী ছিলেন পশ্চিম পাকিস্তানে । সাদেকায়েন । সাদেকায়েন ছিলেন সুলতানের ঘনিষ্ঠ বন্ধু এবং শিষ্য । দুজনের মধ্যে শারীরিক সাদৃশ্য ছাড়াও মিল ছিল ছবি আঁকার ধরন প্রণালীতে। বড় বড় ক্যানভাসে বিশাল ফিগারে আঁকতেন তারা ছবি । সাদেকায়েনের ছবির ফিগারগুলো ছিল অনেকটা ‘ বার্নার্ড বুফের ' ফিগারের মত রোগা - পাতলা । আর সুলতানের ছিল সুপুষ্ট পেশীবহুল দীর্ঘকায় মানুষ । দুজনেই আঁকতেন অত্যন্ত ক্ষিপ্রতার সঙ্গে এবং এক নাগাড়ে কয়েকদিন ধরে অবিশ্রাম গতিতে । এরপর বহু বছর আমার সংগে সুলতান ভাই - এর তেমন কোনো যোগাযোগ ছিল না । ১৯৭৭ এর শেষের দিকে আমি যখন শিল্পকলা একাডেমীতে চারুকলা বিভাগ পরিচালনার দায়িত্ব নিলাম তার কিছুদিন পূর্বে ১৯৭৬ - এ একাডেমীতে সুলতান ভাইয়ের একটি একক প্রদর্শনী অনুষ্ঠিত হয় । চার ফুট খাড়া , আট ফুট লম্বা তেল রঙে বড় এবং ছোট ক্যানভাসে আরো কিছু তেল রঙসহ কাগজে আঁকা বেশ কিছু ড্রইং ছিল । তার হার্ডবোর্ডের ওপর আঁকা গোটা বিশেক চিত্রও ছিল এই প্রদর্শনীতে । একাডেমীর ঐ গোল ঘরটার মধ্যে তিনি থাকতেন এবং ছবি আঁকতেন । একাডেমীর তৎকালীন মহাপরিচালক ড . সিরাজুল ইসলামের সহযোগিতায় ঐ প্রদর্শনী হতে যাচ্ছিল। দায়িত্ব ছিল সুবীর চৌধুরী আর সায়মন পেরেরার ওপর । অবশ্য সায়মন পেরেরাই তখন ছিলেন তার প্রায় সার্বক্ষণিক সঙ্গী । রঙ , তুলি , ক্যানভাস আর নেশার সরঞ্জাম জুগিয়ে দেবার দায়িত্ব ছিল তারই । সায়মনের কাছেই শুনেছি , কি অপরিসীম ধৈর্য্য আর সাহসিকতার সাথে তিনি ঐ বড় বড় ছবিগুলো আঁকতেন । ছবির বিষয়বস্তু ছিল — মুক্তিযুদ্ধ , বাঙলার কৃষক , আদিম মানুষের প্রথম বৃক্ষরোপণ ও এদেশের মানুষ আর এদের জীবন সংগ্রামের দৃশ্যাবলী ছিল তার বিষয়বস্তু । কখনো আবার কিছুটা কল্পনা প্রসূত বিমূর্ত ধরনের কাজও করেছিলেন তিনি ।নতুন কিছু করার ইচ্ছায় প্রায়শঃই আবেগ তাড়িত হতেন সুলতান ভাই । হঠাৎ তার মনে হলো , পুরোনো শহর সোনারগা - র দুএকটি ভবন এখনও যা ব্যবহারযোগ্য , সে রকম একটা ভবন পেলে তিনি তার স্টুডিও তৈরি করতেন । তাই করা হলো । তৎকালীন ঢাকার জেলা প্রশাসক শওকত আলী সাহেবের সহযোগিতায় একটি ভবনে নামমাত্র ভাড়ায় সুলতান ভাইকে স্টুডিও তৈরি করতে অনুমতি দেয়া হলো । যদিও একাজে একাডেমীর তদারকির কোন সরাসরি দায়িত্ব ছিল না তবুও আমি মাঝে মধ্যে যেতাম সুলতান ভাইকে দেখতে । সুলতান ভাই ছবি আঁকতেন কাগজে , ড্রইং অথবা জলরঙে । ছোট ছোট ক্যানভাসে দু - একটা তেল রঙ - এ কাজ করতেন তিনি । সেগুলোকে টাঙিয়ে রেখে একটা গ্যালারীর মত করেছিলেন তিনি । মাঝে মাঝে কিছু পর্যটক যেত তা দেখতে । ওখানে তিনি যে কাজে বেশী মনোযোগী ছিলেন তা হলো রাতে গান বাজনা আর নেশার আড্ডা । সঙ্গী ছিলেন স্থানীয় এক নরসুন্দর যিনি ছিলেন একাধারে তার পাচক ও সহকারী । এ ব্যবস্থাও তাঁর ভালো লাগলো না বেশী দিন । তা ছাড়া ঐ বাড়ীর সামান্য ভাড়াও তিনি দিতেন না । এবং এই সাথে যোগ হলো । তার রাতের আড্ডা সম্বন্ধে অভিযোগ , তাই তাঁকে শীঘ্রই ওখানকার পাট চুকিয়ে চলে যেতে হলো নড়াইলে । কোনো এক জমিদারের পোড়ো বাড়ীতে বাস করতে গেলেন একাডেমীতে অনুষ্ঠিত তার প্রদর্শনীর বড় বড় কিছু ছবি তিনি রেখে ছিলেন জাতীয় অধ্যাপক রাজ্জাক সাহেবের বাসায় শুভানুধ্যায়ীদের সহযোগিতায় সংগ্রহ হলো একটি ট্রাক এবং সেই ট্রাকে করে নিয়ে গেলেন তিনি তার ঐ সব হার্ডবোর্ডে আঁকা ছবিগুলো যার অধিকাংশই তখন অযত্ন আর অবহেলায় দুর্দশাগ্রস্ত হয়ে পড়ে ছিল । সে এক লম্বা কাহিনী । তার ঐ জমিদার বাড়ী পরিষ্কার করা এবং বসবাস শুরু করার পুরো ঘটনাটাই বলেছিলেন সুলতান ভাই এক দুপুরে আমি যখন তাকে দেখতে গিয়েছিলাম ঐ বাড়ীতে আশির দশকের গোড়ার দিকে পায়রা, মুরগী , বিড়াল , আরো কিছু পাখী - সাপ ইত্যাদি সহযোগে তার নিজের বাসস্থান অনেকটা ঐ পরিবেশের সংগে বেশ মানানসই লাগছিল । দোতলায় থাকেন তিনি । এক কামরা থেকে অন্য কামরায় যেতে যে বারান্দা , তার অর্ধেকটা ভাঙা , ওপরে ছাত নেই । পা ফসকে পড়ে গেলে নীচের অঙ্গলে পড়তে হবে এবং নির্ঘাৎ সর্পদংশিত হতে হবে । যাই হোক ইতিমধ্যে তিনি একটি অসহায় হিন্দু পরিবারকে আশ্রয় দিয়েছিলেন ঐ ভাঙা ঘরে । দুটি কন্যা আর তাদের বিধবা মা । প্রতিদানে তারাই তখন সুলতান ভাইকে দেখাশুনা করেন । সুলতান ভাই খুব আগ্রহ নিয়ে একটি মেয়েকে ছবি আঁকা শেখাতেন । বিছানার তলা থেকে বের করলেন অনেকগুলো কাজ খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে বিস্তারিত বর্ণনা দিয়ে দেখালেন আমাকে ঐ কাজগুলো জল রঙের আঁকা কাচা হাতের কাজ- মাঝে মাঝে শিক্ষকের তুলির টান বোঝা যায় স্পষ্ট । এরপরেও সুলতান ভাইকে দেখতে গেছি বেশ কয়েকবার । তিনি তখন বাড়ী বদলেছেন । নতুন বাড়ী বানিয়ে দিয়েছেন যশোর সেনানিবাসের তদানীস্তন জিওসি । সুন্দর ছিমছাম তিন কামরার একটি বাস গৃহ । আর ছবি আঁকার জন্য বড় সাইজের একটা ও তার সংগে ছোট্ট আরো একটা কামরা বিশিষ্ট দুটি ঘর । ইতিমধ্যে সুলতান ভাই সেখানে গড়ে তুলেছেন ‘ শিশু স্বর্গ ' । শিশুদের প্রকৃতির কাছে থেকে এ ধরনের অন্য কোনো স্কুল এদেশে তখন আর কোথাও ছিল না । ছবি আঁকার স্কুলের পাশাপাশি তিনি গড়ে তুলেছিলেন আরও এক নতুন ভবন –একটি মিনি চিড়িয়াখানা । উটপাখী , কাক , মদন টাক , একপাল বিড়াল , হরিণ , ডজন খানেক খরগোস , পায়রা , মুরগী , ঘুঘু ইত্যাদি মিলে প্রায় শ ' খানেক প্রাণী । এদের খাদ্য সংগ্রহ করতেই হিম শিম খেতে হতো সুলতান ভাইকে । ঘুরে ঘুরে দেখতেন তিনি স্বযত্নে গড়ে তোলা তার প্রিয় চিড়িয়াখানা , ফুলের বাগান নানা জাতের পাতাবাহার গাছ । আবার কখনো নিজে যেতেন পাশের চিত্রা নদীর তীরে । ঘুরতে ঘুরতে দেখাতেন আর বলতুেন , এখানে আমি একটা নৌকা বানাবো নূহের নৌকার মত । সেই নৌকায় করে আমার শিশু ছাত্র - ছাত্রীদের নিয়ে বেড়াতে যাবো তাদেরকে বাংলার রূপ - বৈচিত্র্য দেখাতে । তিনি নৌকা বানিয়েও ছিলেন পরবর্তীতে । এবং শিশুদের নিয়ে ঐ নৌকা ক'রে দু'একবার বেড়াতেও গিয়েছিলেন । ইতিমধ্যে সরকার কর্তৃক সুলতান ভাইকে এদেশের এক বিরল সম্মান ‘ রেসিডেন্ট আর্টিস্ট প্রদান করা হয় । যার বাস্তব ব্যাখ্যা শিল্পী এস . এম . সুলতানকে সরকার প্রতিমাসে তার প্রয়োজনীয় রঙ , তুলি , ক্যানভাস কেনার জন্য এবং সংসার পরিচালনার জন্য একটা নির্দিষ্ট অংকের অর্থ প্রদান করবে । এ ব্যবস্থা দু'বছর বলবৎ থাকবে বিনিময়ে তিনি বছরে ছ'টি করে ছবি একাডেমীকে দেবেন । এ ছাড়া বছরে চারটি বিশ্ববিদ্যালয়ে শিল্পকলার ওপর একটি করে লেকচার দেবেন । উদ্দেশ্য হলো , তিনি যেন অর্থাভাবে ছবি আঁকা বন্ধ না করেন । পরে অবশ্য এই রেসিডেন্সির সময়সীমা বর্ধিত করে তার মৃত্যুর পূর্ব পর্যন্ত বহাল রাখা হয়েছিল । এই সময় তিনি , বলতে গেলে নিয়মিতই ছবি আঁকতেন । অনেক বড় বড় ক্যানভাসে তিনি কাজ করেছেন যা এ - দেশে এখনও কোনো শিল্পী তেমন করে আঁকেননি । তিনি তার কাজে কখনো সম্পূর্ণ পারসপেকটিভ বজায় রেখেছেন , আবার কখনো দ্বিমাত্রিকভাবে বিভিন্ন বিষয়বস্তুকে পাশাপাশি সংস্থাপন করেছেন । তার বেশীর ভাগ কাজে তিনি বাদামী , হালকা বাদামী , হলুদ আর কখনো সামান্য লাল রঙ ব্যবহার করতেন যা তার কাজকে অনন্য বিশিষ্টতা এনে দিয়েছে । আপাত দৃষ্টিতে কথা কম বলেন বলে মনে হলেও সুলতান ভাই প্রচুর কথা বলতেন । একবার আমার বাসায় তিনি দিনতিনেক ছিলেন । আমি তখন ধানমন্ডির ১৯ নম্বর সড়কের এক বাসায় দোতলায় থাকতাম । নীচের তলায় থাকতো রশীদ চৌধুরী । ঐ সময় সুলতান ভাই নাওয়া খাওয়া আর ঘুমানোর অল্প কিছু সময় বাদ দিয়ে বাকী প্রায় সব সময়ই কথা বলতেন । কথা বলতেন আমার মেয়ে টুকির সংগে । টুকি নামটা তার খুব পছন্দ ছিল । টুকির জন্য কয়েকটা ড্রইং ও তার একটা পোর্ট্রেটও করেছিলেন ঐ সময় । তার জীবনের বিচিত্র অভিজ্ঞতা তিনি বর্ণনা করতেন ঢুকির কাছে – কি করে তিনি তার রাজমিস্ত্রি বাবার কাছ থেকে নকশা করা শিখতেন । পৃথক পৃথক নক্শার সমতা , সাযুজ্য এবং সেগুলির ব্যবহারের কায়দা কানুন শেখার বিষয় নিয়েও করতেন দীর্ঘ আলাপ। তবে তিনি কখনো একেবারেই ব্যক্তিগত জীবন সম্পর্কে কারো সংগে আলাপ করতেন না । আবার রাতে কখনো রশীদ আর আমার সংগে বসে আলাপ করতেন দর্শন , আধ্যাত্মবাদ আর বিজ্ঞান বিষয়ে । কখনো আমরা একমত হতাম , আবার কখনো ভিন্নমত পোষণ করতাম । সুলতান ভাই বিতর্কের বিষয়গুলো কৌশলে এড়িয়ে যেতন সহসা উত্তেজিত হতেন না । হঠাৎ কখনও উত্তেজিত হলে , কিছু না বলে কল্‌কিতে অগ্নি সংযোগ করতেন । যদিও তিনি বলতেন , ' আমি এখন ও - সব নেশা - টেশা একদম ছেড়ে দিয়েছি ' । আসলে ওটা তিনি কখনই ছাড়তে পারেননি । তবে কমিয়ে ফেলেছিলেন অনেক । রশীদ হয়ত চলে গেছে , আমিও ধারে কাছে নেই । সুলতান ভাই বাশি নিয়ে বসে যেতেন । তখনও পর্যন্ত বাশি তিনি কাছ ছাড়া করতেন না ।‘ জন্তু - জানোয়ারগুলো বোধহয় না খেয়ে আছে । ' ' আমি না থাকলে ওদের খাওয়া দাওয়া ঠিক মত হয় না । ' ' ওরা কিন্তু সব বোঝে । আবার রাগও করে । ' ' রাগ হলে আমি ডাকলে ওরা তখন সাড়া দেয় না । অভিমান করে থাকে । এ ধরনের কথাবার্তা বলে সুলতান ভাই বুঝাতে চাইতেন যে তাঁকে এখন আবার নড়াইল ফিরে যেতে হবে । চলে যেতেন । কিন্তু ছবি আঁকার কাজ প্রায় বন্ধ । পীড়াপীড়ি করলে তিনি একদিন বললেন , ' ওখানে থেকে আমার ছবি আঁকা হচ্ছে না । আমি শহরে একটা বাসা ভাড়া নিয়ে থাকতে চাই যেখানে বসে নিরিবিলিতে ছবি আঁকবো । তার জন্যে মীরপুরে তার পছন্দমত একটা বাসা ভাড়া করে দেয়া হলো সরকারী ব্যয়ে । বছর খানেক রাখা হয়েছিল বাসাটা । কিন্তু তিনি নানা অজুহাত দেখিয়ে কখনই ঐ বাসায় থাকেননি , ছবিও আঁকেননি ওখানে থেকে । ওর কিছু শাগরেদ থাকত ঐ বাসায় । নেশার আড্ডা আর হট্টোগোল করার অভিযোগে বাড়ীওয়ালা ক্ষতিপূরণ দাবী করে বাড়ী ছাড়াতে নোটিশ দিল একদিন । কাজেই সে বাড়ী ছাড়তে হয়েছিল । পরবর্তীতে ক্ষতিপূরণ সম্পর্কে একটা সমঝোতা হয়েছিল বাড়ীওয়ালার সংগে ।বাংলাদেশের যে তিনজন শিল্পীকে এ দেশের মাটি ও মানুষের শিল্পী বলা হয় তাদের মধ্যে সুলতান ভাই অবশ্যই অন্যতম । সুলতান ভাইয়ের ছবির বিষয়বস্তু ছিল , মুক্তিযুদ্ধ , ধানকাটা , চর দখলের জন্য ঢাল সড়কীর লড়াই , গ্রামীণ দৃশ্য , ঘর গেরস্থালির দৃশ্য , ধান মাড়াই , মোঠোপথে গরুরগাড়ী , লাঙল চাষ ইত্যাদি । মোট কথা সবই গ্রাম ভিত্তিক বিষয়বস্তু । একটা বিষয় নিঃসন্দেহে বলা যায় , তা হলো : সুলতানভাই হিউম্যান এনাটমি ( মানুষের শারীরিক গঠনের ) ড্রইং - এ ছিলেন একেবারে সিদ্ধ হস্ত । যদিও তা ছিলো কিছু অতিরঞ্জিত । তবু একেবারে সঠিক এবং মাপসই । এভাবে পেশী গঠনের পদ্ধতি সম্প্রতিকালে শাহাবুদ্দিন রপ্ত করলেও আর কারো কাছে ও ধরনের নৈপুণ্য দেখা যায় না । শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদিনের ড্রইং ছিল অতি উচ্চ মানের কিন্তু কিছুটা ভিন্ন ধরনের একাডেমিক । আর কামরুল , হাসানের ছিল স্টাইলাইজড ড্রইং । তিনজনই ছিলেন ভাব - প্রবণ , আবেগ তাড়িত এবং কারিগরি দক্ষতায় সিদ্ধহস্ত । সুলতান ভাইয়ের সাহচর্যের স্মৃতিকথার বহু ঘটনা এখন আর স্মরণ নেই । সব ঘটনার বর্ণনা দেয়াও সম্ভব নয়। শুরুতেই বলেছি সুলতান ভাইয়ের মধ্যে একটা সম্মোহনী আকর্ষণ ছিল । যার ফলশ্রুতিতে তিনি আজীবন সম্মান এবং অকৃপণ সহযোগিতা পেয়েছেন সকলের কাছ থেকে প্রায় সর্বক্ষেত্রে । জীবনে তিনি ছবি এঁকেছেন অসংখ্য। অর্থ উপার্জনও করেছেন প্রচুর । কিন্তু সে অর্থ সঠিক ভাবে ব্যবহার করতে পারেন নি তিনি । বিশৃঙ্খল জীবন যাপনের ফলে নিশ্চিন্ত হতে পারেননি জীবনের শেষ দিনগুলোতে । এ দেশের বহু নব্য ধনী ব্যক্তিদের সংগ্রহে রয়ে গেছে এস.এম. সুলতানের অসংখ্য চিত্রকর্ম । হয়ত একদিন ভ্যান গঘের মত সুলতানেরও উচ্ছৃঙ্খল জীবন যাপনের কথা ভুলে গিয়ে লোকে তার শিল্পকর্মের মূল্য যাচাই নিয়েই কেবল মাথা ঘামাবে ।

তথ্যসূত্রঃএস এম সুলতান স্মারক গ্রন্থ

সম্পাদনাঃ

সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম 

সুবীর চৌধুরী 

বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি 

প্রকাশকালঃজুন ১৯৯৫


Share

Recent Comments

Recent Articles