মহামনীষী সুলতান


মহামনীষী সুলতান
আব্দুস সাত্তার

‘শিল্পী' শব্দটি আকৃতিতে ক্ষুদ্র হলেও এর ব্যাপ্তি বিশাল। চিত্র, ভাস্কর্ষ, স্থাপত্য, সাহিত্য, চলচ্চিত্র, নাটক, সঙ্গীত এমন কি সংবাদপত্রও এই ' শিল্পী ' পরিবারের অন্তর্ভুক্ত। সুতরাং এ থেকেই শিল্পী শব্দটির গুরুত্ব সহজেই অনুমেয়। 'শিল্পী' শব্দটি যেমন তেমনি শিল্পীরাও গুরুত্বের দিক থেকে সমাজের সকল স্তরের মানুষের ঊর্ধ্বে ।সম্মানজনক দিক থেকে একজন শিল্পীর অবস্থা পিরামিডের শীর্ষস্থানে। কিন্তু আমাদের সমাজের অহংকারী মানুষরা যেমন অজ্ঞ এ বিষয়ে তেমনি অজ্ঞ শিল্পী নিজেরাও। ক'জন জানেন ষোল শতকের মধ্যভাগে পাশ্চাত্য জগতে আইনগতভাবে স্বীকৃত হয়েছে যে, একজন সৃজনশীল (পেশাদার নয়) শিল্পীর স্থান হবে সমাজের সর্বোচ্চ শিখরে। শিল্পী হবেন সমাজের গণ্যমান্য ও শীর্ষস্থানীয় সকল মানুষের মধ্যে সর্বশ্রেষ্ঠ আসনটির অধিকারী। কিন্তু শিল্পী নামধারী হলেই কেউ যে এই সম্মানিত আসনটির অধিকারী হবেন তা কিন্তু নয় । এই সম্মানিত আসনটির অধিকারী হতে হলে শিল্পীকে অবশ্যই নিরহংকার, নির্লোভ , নিষ্কলুস , নির্দলীয়, নিরপেক্ষ, উদার, পবিত্র আত্মার অধিকারী এবং সর্বোপরি সকলের কাছে গ্রহণীয় হতে হবে। এমন শিল্পীর সংখ্যা আমাদের দেশে হাতে গোনা দু'একজন হলেও সুলতান তাঁদের মধ্যে একজন অন্যতম প্রধান শিল্পী । সকল বয়সের সকল স্তরের প্রতিটি মানুষের অতি প্রিয় এস.এম. সুলতান তার উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত।সর্বক্ষেত্রে, সর্ববিষয়ে তিনি ছিলেন স্বাধীন। আক্ষরিক অর্থেই স্বাধীন। স্বাধীন স্বভাব এবং স্বাধীন সত্তাই ছিল সুলতানের জীবনীশক্তি। যে শক্তি 'বামন হয়ে চাঁদে হাত' এই প্রবাদকে পর্যন্ত মিথ্যে প্রমাণ করেছে । অসম্ভবকে সম্ভবে পরিণত করেছে। তিনি অখ্যাত দরিদ্র বাংলাদেশের ততোধিক অখ্যাত নড়াইলের মাছিমদিয়া গ্রামের দরিদ্র রাজমিস্ত্রির সন্তান হয়েও বিশ্ব জয় করেছেন। সকলের চির আকাঙক্ষার, শিল্পসাহিত্যের সুন্দর উপমা সেই চাঁদকেও জয় করেছেন। যে চাঁদের আলোয় আলোকিত হয়ে বিশ্ব শিল্পাঙ্গনকেও করেছেন উদ্ভাসিত। বঙ্গমাতার আর্শীবাদপুষ্ট স্বভাব শিল্পী সুলতান তাঁর বাল্যকালেই ঐশ্বরিক আলোয় আলোকিত হন । যে আলোর তরঙ্গময় ধারায় অবগাহন করে পুলকিত হন নড়াইলের জমিদার শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়, প্রফেসর শাহেদ সোহরাওয়ার্দী, কর্পোরিতোলার মহারাজা, ফিরোজ খান নূন, মিস ফাতেমা জিন্নাহ সহ আরও মহানুভব ব্যক্তিবর্গ । সকলের স্নেহধন্য বাবার দেয়া নাম আদরের ‘ লাল মিয়া ' এক সময় ' সুলতান ' নামে পরিচিত হন। কথাবার্তায় , আচার - আচরণে , চাল - চলনে, মেজাজ - মর্জিতে একেবারে ভিন্ন স্বভাবের সুলতান। বিচিত্র জীবনকাহিনীসমৃদ্ধ কিংবদন্তীর এক মহানায়ক । মহামনীষী। 

স্কুলের প্রথাবদ্ধ শিক্ষা সুলতানকে আকৃষ্ট না করলেও স্কুলের পাঠ্যপুস্তক আকৃষ্ট করেছিলো তাঁকে। পুস্তকে লিপিবদ্ধ কালো কালো অক্ষর নয়, তাঁকে আকৃষ্ট করেছিল পুস্তকে অংকিত চিত্রসমগ্র। এই চিত্রই সুলতানকে ঘরছাড়া, এমনকি নড়াইল ছাড়া করল। তিনি হলেন কলকাতা প্রবাসী । উদার হৃদয় প্রফেসর শাহেদ সোহরাওয়ার্দীর সক্রিয় সহযোগিতায় ভর্তি হলেন কলকাতা আর্ট কলেজে । সোহরাওয়ার্দীর স্নেহে তারই বাড়িতে সুলতানের দীর্ঘ অবস্থান। কিন্তু স্বাধীন সুলতান অস্থির হলেন আবারও। জয়নুল আবেদিন , সহপাঠী কামরুল হাসান, তাঁর প্রিয় শিল্প শিক্ষার প্রতিষ্ঠান এমনকি সোহরাওয়ার্দী পরিবারের স্নেহ - মমতাকে উপেক্ষা করে শিক্ষা অসমাপ্ত রেখেই দীর্ঘ চার বছর পর কলকাতা ছেড়ে চলে গেলেন স্বপ্নের ভূ - স্বর্গ কাশ্মীরে। এরপর কাশ্মীর থেকে সিমলা ( ১৯৪৬ ) । সিমলা থেকে লাহোর, করাচী । সেখান থেকে একেবারে আলো ঝলমল স্বপ্নপুরী আমেরিকায়। চিত্রশিল্পীদের আন্তর্জাতিক কনফারেন্সে পাকিস্তানের প্রতিনিধি হিসেবে যোগদানই তাঁর আমেরিকা গমনের উদ্দেশ্য ( ১৯৫০ ) । প্রদর্শনী করেন নিউইয়র্ক, ওয়াশিংটন, শিকাগো, বোস্টন ।এরপর লণ্ডন। লণ্ডনে পিকাসো, সালভাদর দালি, ব্রাক, পল ক্লী প্রমুখ বিশ্ববিখ্যাত শিল্পীদের সাথে প্রদর্শনীতে অংশগ্রহণ শেষে সরাসরি নিজ বাসভূমে। শহর থেকে বহুদূরে সেই নড়াইলের ছায়াঢাকা পাখিডাকা চিত্রা নদীর ধারে। তাঁর সম্পর্কে কবি শামসুর রাহমান বলেছেন, 'শ্রান্তিহীন এই পথিক এখন নড়াইলে বসত গেড়েছেন ,পাগল করা জনারণ্যের চাপ থেকে অনেক দূরে । সেখানে প্রকৃতি আপন মহিমায় অভিষিক্ত । ' বলেছেন ' ঘন শ্যামলিমা, পাখির কাকলী, চারুলতা আর ক্ষেতভরা ফসলের সৌন্দর্য, পুরুষ আর নারীর ধড়-মূর্তি বৈভবে আর প্রাঞ্জলতায় নিবিড় কৃষিনির্ভর সভ্যতার এক ঐকান্তিক রূপদান করেছেন। তাঁর লাঙল চাষীর- টাইটান দানবের মত বিপুল ও পেশীবহুল অবয়ব আমাদের (য়ুরোপীয়) রেনেসাঁর চিত্রকরদের কথা মনে করিয়ে দেয় ।' ( আধুনিক ঐতিহ্যের নয় শিল্পী, বা.শি.এ. বি.টি.সি ) ।

কবির ভাষায় ‘ চিত্রিত সুলতানের সৃষ্ট মানব-মানবীর অবয়ব টাইটান- দানবের মত বিপুল ও পেশীবহুল হলেও, রেনেসাঁসের চিত্রকে স্মরণ করিয়ে দিলেও সুলতানের ভাষায় তারা বাংলার খেটেখাওয়া সাধারণ কৃষক, জেলে, যাদেরকে শোষণ করে রুগ্ন রাখা হয়েছে' ( বাংলাবাজার পত্রিকা, ১১/১০/৯৪ ) । কৃষিনির্ভর বাংলার খেটেখাওয়া মানুষের পেশীবহুল শক্তিশালী হবারইতো কথা । কিন্তু তা হয়নি । হয়নি কারণ তারা আজীবন শোষণ ও বঞ্চনার শিকার। শাসক ও শোষকদের দ্বারা শোষিত। কিন্তু তাই বলে ঘৃণিত শোষকদের সৃষ্ট মৃতপ্রায় হাড় জিরজিরে কৃষক, জেলে ,কামার , কুমোরের স্বপ্ন একজন শিল্পী দেখতে পারেন না । অবশ্য কেউ কেউ ভিন্ন মতও পোষণ করতে পারেন। কারণ শোষকদের বিরুদ্ধে প্রতিবাদের ভাষা হিসেবে কেউ কেউ তা করতে পারেন।তবে সেক্ষেত্রে দুঃখ আর বেদনায় গোটা জাতি হবে ভারাক্রান্ত । কিন্তু সুলতান তা চাননি।তিনি শোষিত গোটা জাতিকে, বঞ্চিত জনগোষ্ঠীকে জাগ্রত করতে চেয়েছেন।বাঙালি জাতিকে আত্মবিশ্বাসে বলীয়ান করতে চেয়েছেন। আর সেজন্যই তিনি তাঁর কল্পনার মানুষদেরকে তুলির রংয়ে পেশীময় করে রাঙিয়ে তুলেছেন ।তিনি তাঁর চিত্রের মাধ্যমে গোটা জাতিকে অনাবিল প্রশান্তি আর সুখের স্বপ্ন দেখিয়েছেন। নিজ বিচারবুদ্ধি ও আধ্যাত্মিক বিশ্লেষণের মাধ্যমে সুখ-সমৃদ্ধি, শান্তি ও অগ্রগতির পথ দেখিয়েছেন। রাজনৈতিক সংঘাত, সন্ত্রাস, অসততা, জাতিগত ও ধর্মগত বিভেদ, বর্ণবিভেদ ,বিশৃঙ্খলা ও জাতীয় যে কোনো দুর্যোগপূর্ণ মুহূর্তে স্বাধীনভাবে বলিষ্ঠ ভূমিকা পালনের মাধ্যমে দূর্যোগ মোকাবেলায় জাতিকে সঠিক পথ নির্দেশ করেছেন। এসবই করেছেন তাঁর চিত্রের সৃজনশীল চিন্তা - চেতনা, মুক্তবুদ্ধি, নির্দলীয় নিরপেক্ষ ও স্বাধীন সত্তার মাধ্যমে।কারও রক্তচক্ষু, কোনো প্রকার লোভ লালসা, কোনো মহলের প্ররোচনায় কোনো দলীয় প্রলোভনই তাঁকে নিজ বিশ্বাস ও আদর্শ থেকে বিচ্যুৎ করতে পারেনি। তিনি কারও বিরূপ সমালোচনা ও আক্রমণে ভীত হননি। কারণ তিনি যথার্থই সৃষ্টিকর্তার সৃষ্ট স্বাধীন ও নির্ভীক স্রষ্টা ছিলেন।তাঁর সৃষ্টিতে চেনাজানা জগতের বিষয়গুলি নবরূপে আবির্ভূত হয়েছে, যা শুধু দেশের নয় বিশ্বজগতের শিল্পরসিক, সমঝদার ও গুণি ব্যক্তিদেরকেও মুগ্ধ করেছে। কবি আল মাহমুদও এ বিষয়ে শিল্পসম্মত সচেতন অনুভূতি ব্যক্ত করেছেন । তিনি বলেছেন ‘ তাঁর আঁকা সব নরনারীই বাস্তবের নরনারীর চেয়ে একটু সুন্দর, পেশীবহুল , নিখুঁত ও কর্মপরায়ণ । ফিগারগুলো বাস্তবের চেয়ে একটু বিস্তৃততর। এই বাহুল্যই সুলতানের প্রতিটি রচনাকে মহিমা দিয়েছে' ( আধুনিক ঐতিহ্যের নয় শিল্পী ) । কবি তাঁর বক্তব্যে যাকে 'বাহুল্য' বলে উল্লেখ করেছেন সেই বাহুল্যই হচ্ছে প্রকৃত অর্থে শিল্পের নন্দনতত্ত্বের রসসিক্ত স্বরূপ, যার সার্থক প্রয়োগে, যার কল্যাণে তাঁর প্রতিটি চিত্রই নান্দনিক রসে সমৃদ্ধ ও সজীব । 

সুলতান তাঁর জীবনের সুদীর্ঘ সময়ে বিচিত্ররূপী মানুষের সাহচর্যে এসেছেন। খোলামেলা উদার মন নিয়ে তাদের সঙ্গে মিশেছেন। জয় করেছেন তাদের মন। সুলতানের বিনয়ী ব্যবহার ও সম্ভাষণে মুগ্ধ হয়েছে তারা। তাঁর অলৌকিক শক্তিবলে তারা মুহূর্তেই বন্ধুতে পরিণত হয়েছে । অবিশ্বাস্য মনে হলেও এতে বিন্দুমাত্র অতিরঞ্জন নেই । তিনি বন্যপ্রাণীর হহৃদয়ানুভূতি যেমন অনুভব করতেন , তাদের কথা বুঝতেন, তেমনি আবার তারাও সুলতানের কথা স্পষ্টভাবেই অনুধাবণ করতে সক্ষম ছিল। সুলতানের খাবার সময় হলেই তাঁর সাথে তারা আহারে শরীক হতো। মেহমানদের মতই স্বস্নেহে খাবার টেবিলে তাদেরকে বসিয়ে এক সঙ্গে আহার করতেন। তার কিছু কুকুর ছিল, যারা অত্যন্ত অনুভূতিপ্রবণ, সচেতন অতন্দ্র প্রহরীর মত তাকে ঘিরেই অবস্থান করতো, সুলতানের প্রতি যাদের আস্থা, বিশ্বস্ততা এবং কৃতজ্ঞতাবোধ অনেক মানুষকেও হার মানায় । সুলতানের যে কোনো ইঙ্গিত বা নির্দেশ নিমেষেই তারা পালন করতো । কোনো কুকুরের আচরণে তিনি ক্ষুব্ধ হয়ে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা হিসেবে তাকে সারা রাত বাইরে অবস্থান করতে বললে সঙ্গে সঙ্গে অপরাধীর মত তাঁর নির্দেশ পালন করতো। কখনও কখনও জানালার পাশে দাঁড়িয়ে দু'হাত তুলে ক্ষমা চাইবার ভঙ্গিতে করুণ সুরে কাকুতি মিনতি করতো ।

প্রাণীপ্রেমী সুলতানের আর একটি ঘটনার কথা জানা যায় যখন তিনি গুরুতর অসুস্থ হয়ে সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে তখন আমরা তাকে দেখতে গিয়েছি। শিল্পকলা একাডেমীর সুবীর চৌধুরীও সেখানে উপস্থিত । মেজর অপারেশনের জন্য অপেক্ষমান অসুস্থ সুলতান সুবীরকে বললেন নড়াইলের বাড়ীতে পশু- পাখির খাবার সম্ভবত শেষ হয়ে গেছে । সুতরাং কালই যেনো তাদের জন্য পাঁচ হাজার টাকার একটি চেক পাঠানো হয় । অন্যথায় তারা অভুক্ত থাকবে । আশ্চর্যের বিষয় হচ্ছে তিনি পশু - পাখির জন্য টাকা পাঠাতে বলছেন অথচ তার অপারেশন এবং চিকিৎসার জন্য প্রয়োজনীয় অর্থ এবং অষুধ পত্র তখনও যোগাড় হয়নি । তিনি ভুল করেও সে কথা উচ্চারণ করলেন না । এ থেকেই প্রমাণিত হয় কতটা প্রাণীশ্রেমী হলে একজন গুরুতর অসুস্থ রুগী নিজের কথা না ভেবে বনের পশু পাখির কথা ভাবতে পারেন । ' জীবে দয়া করে যেই জন সে জন সেবিছে ঈশ্বর ' এই প্রবাদটি বোধ হয় সুলতানের ক্ষেত্রেই যথাযথভাবে প্রয়োগ করা যায়। প্রাণীপ্রেমী সুলতানের পরোপকার এবং উদারতা প্রকৃতির উদারতাকেও যেন হার মানায়।স্বভাবশিল্পী চিরকুমার সুলতান বিড়াল, কুকুর, সাপ, বেজী, বানর প্রভৃতি প্রাণীকূলকে নিয়ে জীবনযাপন করলেও তাঁর চিত্রে এদের উপস্থিতি নেই মোটেও । কৃষক ,কৃষাণী, বধূ, গ্রাম, গরু, প্রকৃতি এসবই তাঁর বিষয়। বিষয়ের সরল উপস্থাপনা তাঁর চিত্রকে দিয়েছে শিশুর সারল্য । মানুষের শরীরী গঠন কৌশল সুলতানকে দিয়েছে স্বতন্ত্র মর্যাদা। পেশীবহুল মানব সম্প্রদায়ের স্রষ্টা সুলতান তাঁর সৃষ্টির জন্যে বিশেষভাবে গৌরবের অধিকারী । সুলতান বাংলার সাধারণ মানুষকে, স্বাভাবিক মানুষকে, আপন মনোজগতের মাধুরী মিশিয়ে অস্বাভাবিক শক্তিমত্তায় অসাধারণ ব্যঞ্জনায় মূর্ত করেছেন। তাঁর চিত্রকর্ম ব্যাকরণের শুদ্ধ দৃষ্টিবহির্ভূত জগতের অন্তর্ভুক্ত ব্যতিক্রমী এক সুবিশাল রত্নভাণ্ডার ।

পরোপকারী সুলতানের ভূমিকা অবিশ্বাস্য। অতুলনীয়। তাঁর আত্মত্যাগের মহিমা ও প্রশংসা প্রচারযোগ্য যথার্থ শব্দচয়ন সুকঠিন কাজ। তাঁর জীবনে অর্জিত সমস্ত অর্থসম্পদ অকাতরে বিলিয়ে দিয়েছেন পরের তরে। তাঁর মূল্যবান শিল্পের বিনিময়ে অর্জিত লক্ষ লক্ষ টাকা নিমেষেই নিঃশেষ করেছেন পরোপকারে। অফুরন্ত অর্থের অধিকারী হয়েও সর্বক্ষণ নিঃস্ব ছিলেন তিনি । আর দশজনের মত গাড়ি - বাড়ির কথা স্বপ্নেও ভাবেননি কখনও। অথচ গাড়ি - বাড়িসহ সহজেই যাপন করতে পারতেন বিলাসী জীবন। তার প্রতিষ্ঠিত ' নন্দনকানন প্রাইমারী স্কুল',  'নন্দনকানন হাইস্কুল' , ‘নন্দনকানন চারুকলা স্কুল' , 'কুড়িগ্রাম ফাইন আর্ট স্কুল ' , যশোর শহরের ' একাডেমী অব ফাইন আর্টস ' বর্তমানে ' চারুপীঠ ' , ' শিশুস্বর্গ ' এসবই তাঁর হৃদয় নিংড়ানো প্রাণের প্রতিষ্ঠান। মানবতার সেবায় উৎসর্গীকৃত প্রতিষ্ঠান। মানবপ্রেমী, শিশুপ্রেমী, প্রাণীপ্রেমী সুলতানের রক্তে পড়া প্রতিষ্ঠান। এই সমস্ত অগণিত প্রতিষ্ঠানের প্রতিষ্ঠাতা সুলতান। ক্যামব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয় ঘোষিত ' ম্যান অব এশিয়া'র সুলতান , বাংলাদেশ সরকার প্রদত্ত সম্মান' আর্টিস্ট ইন রেসিডেন্স ' - এর সুলতান , একুশে পদক ও স্বাধীনতা পদকপ্রাপ্ত সুলতান, বিশ্ববরেণ্য চিত্রশিল্পী এস. এম. সুলতান, যিনি রাজধানীর চাকচিক্য ও জৌলুসকে অগ্রাহ্য করে নড়াইলের নিভৃতে শিল্পচর্চায় নিমগ্ন ছিলেন। সেই সুলতান আর আমাদের মাঝে নেই। ১০ ই অক্টোবর ৯৪ বিকেল ৪ টা ৩৫ মিনিটে তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। মহামনীষীর মহাপ্রয়াণ ঘটলো। জাতি হলো অপরিসীম ক্ষতির সম্মুখীন। হলো বন্ধুহীন । তবু তিনি বেঁচে রইলেন আমাদের মাঝে, জাতির জন্যে রেখে যাওয়া তাঁর অগণিত মূল্যবান কাজে।

তথ্যসূত্রঃএস এম সুলতান স্মারক গ্রন্থ

সম্পাদনাঃ

সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম 

সুবীর চৌধুরী 

বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি 

প্রকাশকালঃজুন ১৯৯৫

Share

Recent Comments

Recent Articles