অন্য এক সুলতান

নদীর নাম চিত্রা , তীরে প্রায় বিঘা দু'য়েক জায়গা জুড়ে ফুল, লতা - গুল্মে ঠাসা একটি বাড়ি, যেন মালী সযত্নে তার ঝাঁপিতে সাজিয়ে রেখেছে রং বেরংয়ের ফুল সত্যিই অপূর্ব, বিচিত্র আয়োজনে পরিপূর্ণ এই বাড়িটি রকমারি সব পাতাবাহার লতানো গাছতা প্রায় কয়েকশ ' রকমের ফুলের গাছ, ফলের গাছঃ আম, জাম, কাঠাল ইত্যাদি বাড়ির সীমানা ঘিরে নারিকেল সুপারীর গাছ সমস্ত এলাকার সীমা নির্ধারণ করে চলেছে, তার মাঝেই একটি কুটির, কবির ভাষায় ' যেন ছায়া সুনিবিড় শান্তির নীড়।'বাগান বিলাস গাছগুলো মিলে - মিশে অর্ধচন্দ্রের মত তৈরি করেছে প্রধান ফটক, মাঝ দিয়েই আঁকা বাকা পায়ে চলা পথ, পিছনের দরজা খুললেই শান্ত সুন্দর কাক চক্ষু জলে প্রবাহিত চিত্রা নদী, যার বুক চিরে বয়ে চলে পাল তোলা নৌকা, মাঝি গায় ভাটিয়ালী সুর সমস্ত জায়গাটিকে মনে হয় তপোবন

খানেই শেষ নয়, এই তপোবনে রয়েছে অনেক রকম জীবজন্তু - ইঁদুর, বিড়াল থেকে শুরু করে বিষাক্ত সাপ পর্যন্ত। বাড়ির সামনে একটি আর্ট গ্যালারি , উঠোনের মাঝে সারি সারি বেঞ্চ পাতা, এখানে প্রতি সপ্তাহের শুক্রবার 'দুয়েক শিশু এসে ছবি আঁকা শেখে লাল ভাই নিজ হাতে তাদের ছবি আঁকা শেখান এই মিনি চিড়িয়াখানার মাঝে বসে সব বাচ্চারা নির্মল আনন্দের মাঝে খেলার ছলে জীবজন্তু, গাছপালা প্রকৃতির ছবি আঁকে

সব আয়োজন শিশুদের জন্যেই, আয়োজনে বিশ্ববরেণ্য শিল্পী এক জীবন্ত কিংবদন্তী এস. এম. সুলতান হ্যাঁ এতক্ষণ এস.এম. সুলতানের কথাই বলছিলাম তাঁর আর এক নাম লাল মিয়া , আমরা ছোটবেলা থেকেই লাল ভাই নামেই ডাকতাম , আর প্রজন্মের সব শিশুরা সুলতান কাকু বলেই ডাকে শিল্পী সুলতান একটি নাম, এক বরেণ্য শিল্পীর জীবন আলেখ্য যিনি জন্মেছিলেন ১৯২৪ সালের ১০ আগস্ট নড়াইলের এক গ্রামে বসবাস করেছেন এই নড়াইল জেলারই রূপগঞ্জ বাজার হতে প্রায় এক কিলোমিটার দক্ষিণে নিশিনাথতলা পার হয়ে মাছিমদিয়া গ্রামে চিত্রা নদীর তীরে এই তপোবনেশিল্পী সুলতানের নাম বাংলাদেশের সকলেই জানেন বিখ্যাত এক শিল্পী হিসেবে আজ এখানে শিল্পী সুলতানের শিল্পী সত্তার বর্ণনা করবো না , তার জীবনের একটি অজানা দিক পাঠকদের সামনে তুলে ধরবো

শিল্পী সুলতান শৈশবে ১৯২৮ সালে নড়াইল ভিক্টোরিয়া কলেজিয়েট স্কুলে তার শিক্ষাজীবন শুরু করেন ১৯৩৮ সালে কলিকাতা আর্ট কলেজে ভর্তি হন কিন্তু পড়াশুনা সমাপ্ত না করেই ১৯৪৪ - প্রতিষ্ঠান ত্যাগ করেন এখানে সেখানে কিছুকাল ঘুরে বেড়িয়ে কাশ্মীরের পাহাড়ে উপজাতীয়দের সাথে বসবাস শুরু করেন এবং তাদের নিয়ে ছবি আঁকতে আরম্ভ করেন ১৯৪৬ - সিমলাতে প্রথম তাঁর একক চিত্র প্রদর্শনী হয় ১৯৫০ - তিনি আমেরিকা যান , ১৯৪৬ থেকে ১৯৫৩ পর্যন্ত বিশ্বের বিভিন্ন দেশে তার প্রায় ২০ টি একক প্রদর্শনী হয় ১৯৫৩ - তে দেশে ফিরে আসেন এবং কোনো প্রকার প্রাতিষ্ঠানিক সনদপত্র না থাকায় আর্ট কলেজে শিক্ষকতার সুযোগ থেকে বঞ্চিত হন

 যা'হোক , তিনি ১৯৫৩ - তে সোজা নড়াইলে চলে আসেন এবং দীর্ঘ ২৩ বছর তুলিতে আর রং লাগাননি কারণ অজানা , তবে হতে পারে সমাজের প্রতি অভিমান , হয়তো কোনো দুঃখবোধ , হয়তোবা এটা শিল্পীর খেয়াল। মূলত সময়ই তিনি জীবজন্তুর প্রতি আকৃষ্ট হন এবং জীবজন্তু প্রেমী হয়ে ওঠেন

এই সময়কালে বিশেষত তিনি নড়াইল জমিদার বাড়ির শিব মন্দিরে বসবাস করতেন ভাবুক প্রকৃতির মানুষ তিনি , খুব সুন্দর বাঁশি বাজাতে পারতেন মনে পড়ে ছোটবেলায় দেখেছি বিভিন্ন সময় তিনি ' 'নড়াইল টাউন ক্লাবে' বাঁশি বাজিয়ে শোনাতেন অপূর্ব সে বাঁশির সুরশুনে মনে হত যেন তিনি বাঁশি বাজাতেই ওস্তাদ যেখানে তিনি বসবাস করতেন সেটি ছিল পরিত্যক্ত একটি শিবমন্দির , চারদিকে ঘন বনজঙ্গলে ভরা , মন্দিরের ছাদে বট গাছের শেকড় বিস্তার করে তার সদর্প উপস্থিতি ঘোষণা করছে তার ভয়ে খসে পড়ছে চুন , সুড়কী , গাঁথুনী ফাঁক ফোঁকরে বসবাস করতো বিষাক্ত সাপ ভয়ে চলে আসেননি সেখান থেকে বরং পরম স্নেহে তাদের লালন পালন করতেন , দুধ কলা খাওয়াতেন এবং তাদেরকে সঙ্গে নিয়েই সেখানে বসবাস করতেন জীবজন্তুর প্রতি ছিল তার নিখাদ ভালবাসা তাই বোধ হয় সকলে তার সঙ্গে মিত্রতা গড়তো কোনো শত্রুতা ছিল না ছোটবেলায় দেখেছি কোনোদিন হয়তো বিড়ালের বাচ্চা , কোনোদিন কুকুরের বাচ্চা , কখনও বাঁদর, কখনও শেয়ালের বাচ্চা আবার কখনওবা শজারুর বাচ্চা কোলে আর এক হাতে একটা বাঁশি নিয়ে নড়াইলের রাস্তা দিয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছেন। লম্বা ছিপছিপে গড়ন, পায়ের গোড়ালী অবধি ছাই রংয়ের পাঞ্জাবি পরা, লম্বা লম্বা চুল কাঁধ পর্যন্ত নেমে এসেছে, সুন্দর বাঁকা হাসি হেসে আমাদের স্নেহ করতেন আর দেখাতেন তাঁর কোলের জন্তুটি কত ভাল বন্ধু এমন কোনো জন্তু দেখিনি যার সঙ্গে তাঁর বন্ধুত্ব হয়নি আমরা তখনও তার শিল্পী প্রতিভার কথা জানতাম না,  তখন তাকে জানতাম লম্বা ছিপছিপে দীর্ঘ চুলওয়ালা পাগলের মত এক জন্তুপ্রেমী হিসেবেবড় হয়ে জানতে পারলাম জীবন্ত এক কিংবদন্তী আমাদের মাঝে ঘুরে বেড়াচ্ছেন কি সাধারণ মানুষের বেশে এমনকি সেইদিনগুলোতে অনেক অর্থকষ্টেও দিনযাপন করেছেন, দশজনার সহযোগিতায় , কখনওবা কারো বাড়িতে আশ্রিতের মত দিন যাপন করতে হয়েছিল

দেখা যেত কখনও কখনও ঘণ্টার পর ঘণ্টা চায়ের দোকানে বসে গল্প শুনিয়ে, বাঁশি বাজিয়ে আনন্দ দিতেন সকলকে খাওয়া দাওয়া চাল - চুলোর কোনো নিশ্চয়তা নেই , ঘর বাড়ির কোনো ঠিকানা নেই, আর থাকবেইবা কেমন করে , তিন কূলের তাঁর কেউ ছিল না, এমনকি তিনি বিয়েও করেননি যে ছেলেমেয়ে কেউ থাকবে জগতের সকলেই ছিল তাঁর আত্মীয় স্বজন সংসার - ধর্ম কিছুই তার ভাল লাগতো না দিনে যাযাবরের মত ঘুরে ঘুরেই কাটিয়ে দিতেন আর রাত হলে শিবমন্দিরে ঘুমুতেন এরপর তিনি শিবমন্দির ত্যাগ করে মাছিমদিয়া গ্রামে জমিদারদের আর এক পরিত্যক্ত এবং বাসের অনুপযুক্ত এক বাড়িতে এসে উঠলেন চুন সুড়কি খসে পড়ছে , ছাদ দিয়ে পানি চুইয়ে চুইয়ে পড়ছে , আস্তর খসা দেওয়াল , ভ্যাপসা পরিবেশ এখানে অবস্থানকালে তাঁর সংসারের সদস্য সংখ্যা একে একে বাড়তে থাকলো কয়েক ডজন গিনিপিগ, ইঁদুর, বিড়াল, কুকুর , বাঁদর , কয়েক প্রকার পাখী ইত্যাদি এগুলোই ছিল তার সন্তানের মত এদের খাবারের জন্য প্রতিদিন প্রয়োজন হত প্রায়  সের দুধ , কয়েক ডজন কলা , মাছ , মাংস আরো কত কি এদের নিয়ে এমনি করেই কেটে গেল ২৩ টি বছর ১৯৭৬ - তার মোহভঙ্গ হল , স্বাধীন বাংলায় তাঁর প্রথম একক চিত্র প্রদর্শনী হল ঢাকায় , দ্বিতীয়টি হল তার ১০ বছর পর ১৯৮৬ -

এই বহেমিয়ান শিল্পীর দুর্দশা দেখে সম্ভবত ১৯৮৫ - দিকে বাংলাদেশ সরকার মাসিক আর্থিক ভাতায় এবং সরকারী খরচে ঢাকাতে থাকার ব্যবস্থা করেন থাকলেনও কিছুদিনঢাকাতে একবার দেখা হল, জিজ্ঞাসা করলামলাল ভাই কেমন আছেন ? ভাল আছি এবং এখন থেকে ঢাকাতেই থাকবো , কি ভাল হল না ? বললাম খুব ভাল মনে মনে খুব খুশী হলাম এই ভেবে যে , অন্তত এতদিনে লাল ভাইয়ের যাযাবরী জীবনের অবসান হল, অন্তত অর্থকষ্টে ভুগতে হবে না

কিন্তু কিছুদিন যেতে না যেতেই তিনি হাঁফিয়ে উঠলেন শহুরে যান্ত্রিক পরিবেশ তাঁর মোটেও ভাল লাগলো না। যেন নির্বাসিত হয়েছেন তিনি মুক্তির লক্ষ্যে একদিন ঢাকা শহরের মানুষকে খোদা হাফেজ জানিয়ে সরকারের সংগে সকল চুক্তি ছিন্ন করে চলে এলেন নড়াইলের সেই পোড়োবাড়িতে তাঁর সন্তানদের মাঝে চড়ুই পাখির মত পাকা ইমারত তাঁর পছন্দ হল না , বাবুইয়ের মত খড়ের ঘরেই আবার চলে এলেন যেখানে গিনিপিগ নেই, বিড়াল নেই ,ইঁদুর নেই , কুকুর নেই , সর্বোপরী যেখানে তাঁর আদরের নিমাই নেই , সেখানে সুলতান বাঁচতে পারেন না।

বলাবাহুল্য তাঁর পোষা জীবজন্তুর প্রত্যেকের এক একটি নাম ছিল এবং তাদেরকে সেই নামেই ডাকতেন বিড়ালকে বিড়াল বা কুকুরকে কুকুর বলে ডাকতেন না যেমন দু'টি এ্যালসেশিয়ান কুকুরের নাম যথাক্রমে জিমি আর ববি , একটি বিড়ালের নাম মিনি , যেটি তাঁর সঙ্গে সঙ্গে সারাক্ষণ ঘুর ঘুর করে ঘুরে বেড়াতো সব থেকে প্রিয় একটি হনুমান ছিল তার নামই নিমাই সর্বশেষ যখন তাঁর বাড়িতে গেলাম , তিনি তাঁর জীবজন্তুদের মাঝে নিয়ে গেলেন এবং সবাইকে একে একে দেখিয়ে সবার শেষে এলেন নিমাই - এর খাঁচার সামনে নিমাই লাল ভাইকে দেখে লাফালাফি শুরু করে দিল , যেন বলছে এখনই খাঁচা খুলে দাও , দেখাচ্ছি তোমাদের মজাটা নিমাইয়ের উত্তেজনার কারণ, তার একটু আগেই স্থানীয় এক বাচ্চা ছেলে লাঠি দিয়ে খোঁচা মেরেছিল লালভাই বললেন খুব দুষ্ট হয়ে গেছেখুব করে বকুনি দিলেন-'বন্য কোথাকার' এতেই নিমাই যেন কুঁকড়ে গেল এবং শরমিন্দা হল  


তিনি এদের সবাইকে নিয়ে একটি চিড়িয়াখানা গড়েছিলেন তাঁর এই চিড়িয়াখানার বহরে আছে ছোট বড় মিলিয়ে ডজন দু'য়েক বিড়াল যেগুলো সারা বাড়িময় যত্রতত্র ঘুরে বেড়াতো, দেশী বিদেশী মিলিয়ে গণ্ডা দুয়েক কুকুর , গিনিপিগ ছিল তা ' দুয়েক , বানর বিভিন্ন প্রজাতির গোটা দশেক , হনুমান গোটা চারেক , মদনটাক পাখী ছিল একটা এই পাখীটির একটি ইতিহাস আছে- একদিন সুলতান সাহেব নদীর পাড়ে হাঁটছিলেনএমন সময় দেখলেন একটি মদনটাক পাখী আহত হয়ে নদীর পাড়ে পড়ে আছে , তিনি সেটিকে বাড়িতে নিয়ে এলেন, ওষুধ লাগিয়ে দিলেন ক্ষতস্থানে , সুস্থ করে তুললেন এবং এখানেই তার এক নিরাপদ আশ্রয় হল , তার জন্যে সুন্দর খাঁচা বানিয়ে দিলেন , সবার দর্শনের জন্য তিনি তাঁর এই চিড়িয়াখানার সদস্যপদও দিলেন

 এরপর ছিল বনবিড়াল একজোড়া , ভল্লুক একটা , বাঘ ছিল একটা , বললেন অসুখ হয়ে মারা গেছে , বেজী তিনটা , পাখি ছিল প্রায় বিশ রকমের তাও প্রায় 'খানেক হবে , টিয়া , ময়না , কাকাতুয়া , মুনিয়া , শালিক , দোয়েল ইত্যাদি গয়াল জাতীয় পাহাড়ী গরু ছিল দুটি , ঘোড়া ছিল দু'টি রাজহাঁস ছিল ডজনখানেক , সাপও ছিল ডজন খানেক তবে ছাড়া থাকতো , ফুলের বাগানই তাদের বিচরণ ক্ষেত্র এবং এখানেই তাদের বসবাসের জায়গা কখনই কাউকে কোনো ক্ষতি করতে শোনা যায়নি

 সবগুলোই মোটামুটি খাঁচার ভিতর থাকতো ,শুধু কুকুরগুলো ছাড়া থাকতো বাড়ি পাহারায় বিড়ালগুলো ঘরে বাইরে বিছানায় ,চৌকিতে , টেবিলে, চেয়ারে, আলমারীর ওপরে যেখানে সেখানে বসে অথবা ঘুমিয়ে থাকতো, হয়তো টেবিলে বসে কোনো মা বেড়াল তার বাচ্চাকে দুধ খাওয়াতো বলা যায় , এই দু'বিঘার মত জায়গা জুড়ে পুরোটাই ছিল একটা চিড়িয়াখানা আলাপে জানতে পারলামএকবার রাঙ্গামাটি থেকে একজোড়া হরিণের বাচ্চা উপহার পেয়েছিলেন তাঁর চিড়িয়াখানার জন্য সেখান থেকে নড়াইল আনার পথে চট্টগ্রামের কাছাকাছি কোনো এক চেকপোস্টের কাছে পুলিশ সীজ করে নিয়ে গেছে, যেহেতু সেসময় সঙ্গে কোনো সরকারী অনুমতি ছিল না এসকল জীব- জানোয়ারের জন্য নাকি সরকারী অনুমতি লাগে তিনি কথায় কথায় আরও বললেন, ' যদি কেউ একটা অনুমতি এনে দিতে পারতো বন পশুপালন মন্ত্রণালয় হতে তবে এসকল অপ্রচলিত জীব - জানোয়ার দিয়ে এই চিড়িয়াখানাকে আরও সমৃদ্ধ করতে পারতাম ।' 

শিশুদের তিনি খুব ভালবাসতেন তাদের জন্য গড়েছেনশিশুস্বর্গ' সুলতান সাহেবের বাড়ির আঙ্গিনায় সারি সারি বেঞ্চ পেতে শিশুদের সপ্তাহের প্রতি শুক্রবার আঁকা শেখানো হত প্রায় 'তিনেক শিশু ছিল এই শিশু স্বর্গের সদস্য খুব সকালে যখন তারা দল বেঁধে আসত, প্রথমে তাদের দুধ খাওয়ানো হ'ত , তারপর শিল্পী সুলতান নিজ হাতে তাদের আঁকা শেখাতে শুরু করতেন পাশেই ছিল তাঁর আর্ট গ্যালারী , নাচের স্কুল ইত্যাদি।

সুলতানের চিড়িয়াখানা গড়ার উদ্দেশ্য হল-চিড়িয়াখানার মধ্যে ছড়িয়ে ছিটিয়ে বসে সকল বাচ্চারা প্রাকৃতিক পরিবেশে জীবজন্তু , গাছপালা যা দেখবে তারই ছবি আঁকবে এবং এতে করে তাদের সৃজনশীল মননের বহিঃপ্রকাশ ঘটবে প্রসংগে তিনি বলতেন- তিনি ওটি করেছিলেন ' In order to bring children in close contact with and expose them to animals and birds which will bring up their moral development from childhood . Love for animals and birds at early stage of their life will create love and affection for all creatures including human beings, the extraordinary need for the present world to bring world peace and tranquility. ' তিনি হয়তো বর্তমান সমাজের অস্থিরতা , সংঘাত , যুব সমাজের মাঝে উচ্ছৃংখলতা দেখে অনাগত ভবিষ্যতের চিন্তায় ভীত ছিলেন হতে পারে বিশ্বাস ছিল যে বিশ্বশান্তি ফিরিয়ে আনার লক্ষ্যে সকল শিশুদের শৈশবকাল থেকে প্রকৃতি , পাখী জীবজন্তুর প্রতি ভালবাসা শেখাতে হবে যা থেকে মানুষের প্রতি ভালবাসা গড়ে উঠবে , ফলে তাদের নৈতিক চরিত্র গঠনে সহায়ক হবে , যাতে করে তারা সমাজকে একটা সুখী সুন্দর শান্তিপূর্ণ কাল উপহার দিতে পারে যদিও প্রয়া সারাবিশ্বের শান্তি প্রক্রিয়ার প্রেক্ষিতে খুবই সীমিত তবুও সাধ্যমত চেষ্টা করতে দোষ কোথায় ? এমনওতো হতে পারে সুলতানের উদাহরণ অনুসরণ করে আরো অনেকে এমন দায়িত্ব নেবেন সমাজের শান্তি ফিরিয়ে আনতে, হয়তো তা একদিন ফিরেও আসবে।

শিশুদের জন্য তিনি ১২ লাখ টাকা ব্যয় করে গড়েছিলেন ৬০ ফুট দীর্ঘ এক নৌকা উদ্দেশ্য তাঁর কোন এক জন্মদিনে এসকল শিশুদের নিয়ে চিত্রা নদী বৈয়ে খুলনায় রূপসা নদী পার হয়ে সমুদ্র ভ্রমণে যাবেন , সেখান থেকে হিরণ পয়েন্টে শিশুস্বর্গের শিশুরা এই নৌকার জানালায় জানালায় বসে চারদিকের সব প্রাকৃতিক দৃশ্যের ছবি আঁকবে আর নৌকা এগিয়ে যাবে তর তর করে সমুদ্রের পানে এমনি করে সমুদ্রের দিকে চলতেই থাকবে, চলতেই থাকবে আর কোনোদিন এই দুঃখ , জরা , বেদনা ভরা সংসারে ফিরে আসবে না ঠিক হ্যামিলনের বংশীবাদকের মত জানি না কেন ? হয়তো এটাও ছিল শিল্পীর আর একটি খেয়াল

 তথ্যসূত্রঃএস এম সুলতান স্মারক গ্রন্থ

সম্পাদনাঃ

সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম 

সুবীর চৌধুরী 

বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি 

প্রকাশকালঃজুন ১৯৯৫

Share

Recent Comments

Recent Articles