শিল্পী সুলতানের পাঠশালা

“শিল্পী সুলতানের পাঠশালা”

সুলতান কাকুকে স্যার বলা নিষেধ ছিল। আমরা কাকু বলে ডাকতাম। কাকু বাংলাদেশের যেখানেই যেতেন সেখানেই তার একটা পাঠশালা তৈরী হয়ে যেত। যে পাঠশালায় কোন বেতন দিতে হত না, উপরন্ত ছবি আঁকার জন্য কাগজ, রং, পাওয়া যেত। বেশ ভাল মানের কাগজ রং ছিল সেগুলো, যা পরে বড় হয়ে চারুকলায় পড়ার সময়ও খুব একটা কিনতে পারতাম না। আর কাকু থাকতেন জমিদারদের তৈরী পুরানো কোন পড়ো বাড়ীর দোতলাতে। তো যশোরেও সেরকম একটা পুরানো জমিদার বাড়ীতে কাকু থাকতেন। ছোট বড় বিভিন্ন বট জাতীয় গাছে সে বিল্ডিং এর বেশির ভাগই খেয়ে ফেলেছিল। আমরা যে ঘরের মেঝেতে ছবি আঁকতাম সে মেঝেতে ফাটল ধরে গিয়েছিল। পাশের একটা ঘরের মেঝে ভেঙে গর্ত হয়ে গিয়েছিল, নীচের ঘর দেখা যেত। আরাক ঘরের ছাদের অর্ধেক ভাঙা, যেখান দিয়ে ঐ ঘরে বৃষ্টির পানি পড়ত। বারান্দাগুলোও ছিল অর্ধেক অর্ধেক ভাঙা। আমাদের ওসব দিকে যাওয়া নিষেধ ছিল। 

আমাদের পাঠশালা ছিল বিকাল থেকে, কিন্তু আমরা দুপুরে খেয়েই চলে যেতাম। কাকু ঘুম থেকে ওঠা পর্যন্ত আমরা নীচতলার অন্ধকার ঘর গুলোতে গুপ্তধন খোঁজা যাতীয় খেলা করতাম আর ঘরে ঘরে রাখা কাকুর বিশাল বিশাল ছবিগুলো নিয়ে গবেষণায় মেতে যেতাম। কখনো কখনো সে সব ছবি দেখে আমরা কপি করতাম। কাকু কখন যেন ঘুম থেকে উঠে পিছনে এসে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে আমাদেরকে দেখতেন। 

কাকুর কথা এত সুন্দর ছিল যে, আমরা সবাই কাকুকে খুব পছন্দ করতাম। 

কাকু কিন্তু কোনদিন সরাসরি আমাদেরকে কিছু শেখাতেন না। অথচ আমরা তাঁর কাছ থেকে অনেক কিছু শিখতাম। কাকুকে ছবি দেখালে কাকু খুব সুন্দর করে প্রশংসা করতেন। আমরা প্রশংসা পেয়ে আরো আরো বেশী ছবি আঁকতাম। এত আগ্রহ পেতাম যে বাসায় এসে আরো ছবি আঁকতাম, কাকুকে দেখিয়ে প্রশংসা শোনার লোভে। 

তো প্রতিদিন কাকুর আঁকা ছবিগুলো দেখতে থাকলে আর বেশী বেশী ছবি আঁকতে থাকলে আলাদা করে শেখার কি কোন প্রয়োজন থাকে? 

তবে মাঝে মাঝে কাকু হঠাৎ একটা কিছু বলতেন। যা একেবারে প্রশ্নের মত মনে গেঁথে যেত। গবেষণায় মগ্ন করে দিত আমাদের। যেমন একবার বলেছিলেন, “নৌকোয় কালো রং দাও কেন? নৌকোর রং কী কালো?” 

আজ আমি সব রং এর মধ্যেই সব রং দেখতে পাই।

২০শে ভাদ্র, ১৪২৭

Artist Shipu Moniruzzaman 

Assistant Professor 

ULAB

Share

Recent Comments

Recent Articles