সুলতানের ছবি
জসীম উদ্দীন, জয়নুল আবেদিন, এস.এম. সুলতান এদের শিল্পকর্ম একান্তই বাংলাদেশের। একান্তই বাংলাদেশের জলহাওয়াতেই এদের শিল্পকর্মের পরিপুষ্টি।অন্য কোন জমিনে চাষ করে কেউ ফসলের এই রং এই রস ফুটিয়ে তুলতে পারতো কিনা সন্দেহ। তার একটা কারণ এই হতে পারে যে, এদের মানসিকতা দৃষ্টিভঙ্গি সবই বাঙালীর – অবশ্যই বলতে হবে অসাধারণ বাঙালীর।বাংলাদেশ কখনো বর্ণাশ্রম ধর্ম মেনে নেয়নি। বাঙালী ব্রাহ্মণ এবং অন্য ব্রাহ্মণের মধ্যেএখনও জল চল নয়। বাঙালী মুসলমানের মধ্যে আশরাফ আতরাফও নিতান্তই কথার কথা। তা সুলতানের ছবির জগতে যাদের দেখি, তারা বাংলার সাধারণ মানুষ।এই সব সাধারণ মানুষকে অসাধারণ করে দেখার ক্ষমতাই সুলতানের ছবির অন্যতম বৈশিষ্ট্য। এই ছবিসমূহের মধ্য দিয়ে শিল্পী একটি ‘ম্যাসেজ’ পাঠিয়েছেন। সুলতানের ছবি যাঁরা দেখেছেন, তারা সজ্ঞানে অতোটা অনুভব করতে না পারলেও অন্তরে অন্তরে ম্যাসেজটি গ্রহণ করতে কোনো বেগই পেতে হয়নি। বাংলার মানুষের প্রতি সুলতানের স্বতোৎসারিত ভালোবাসা এবং অগাধ শ্রদ্ধাবোধ থেকেই সৃষ্টি হয়েছে এই 'ম্যাসেজ'।সুগভীর ইতিহাসবোধ এবং ইতিহাসের প্রতি একটা অকুণ্ঠ আনুগত্য না থাকলে কারোতুলি এ রকম সৃষ্টি করতে পারে না, সেকথা বলার অপেক্ষা রাখে না। তাছাড়া সুলতানের ছবির বিষয়ে আরো একটা বিষয় ভেবে দেখার আছে, সুলতান বাংলা এবং বাঙালী বিষয়বস্তু নিয়ে যে সকল ছবি এঁকেছেন, সেগুলো দেশকালের গণ্ডি অতিক্রম করে সব মানবের উজ্জ্বল উত্তরাধিকারে পরিণত হয়েছে।এ রকম একটা গুজব সমস্ত দুনিয়াতেই চলে আসছে যে শিল্পীর শিল্পকর্ম আর শিল্পীর ব্যবহারিক জীবন এক নয়। রবীন্দ্রনাথ তো বলেছেনই, ‘কাব্য পড়ে যেমন ভাবো কবি তেমন নয় গো'। কিন্তু এস. এম. সুলতান সম্বন্ধে একথা একেবারেই খাটে না। সুলতানের সংজ্ঞা বহির্ভূত জীবন—প্রণালী থেকেই এই সব অপূর্ব চিত্রমালা সম্ভাবিত হয়ে উঠেছে।
তথ্যসূত্রঃ
জাতীয় অধ্যাপক আবদুর রাজ্জাকের লেখাটি সুলতানের ১৯৮৭-র প্রদর্শনীর স্যুভেনির থেকে নেয়া
Recent Comments